লাং ক্যান্সার কী?
লাং ক্যান্সার হলো ফুসফুসের কোষে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে এমন এক ধরনের ক্যান্সার। এটি সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে: নন-স্মল সেল লাং ক্যান্সার (NSCLC) এবং স্মল সেল লাং ক্যান্সার (SCLC)। NSCLC সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, যেখানে SCLC দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
লাং ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ
প্রাথমিক পর্যায়ে লাং ক্যান্সার সাধারণত কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না। তবে, রোগটি উন্নত হলে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
১. স্থায়ী কাশি: কাশি যা সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে।
২. শ্বাসকষ্ট: সাধারণ শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা।
৩. রক্তাক্ত কফ: কাশির সাথে রক্ত দেখা যেতে পারে।
৪. বুকের ব্যথা: দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা শ্বাসকষ্টের কারণে বুকের ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
৫. ওজন কমে যাওয়া: কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
৬. বারবার ফুসফুসের সংক্রমণ: যেমন নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিস।
লাং ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি
লাং ক্যান্সারের চিকিৎসা রোগের ধরণ, পর্যায় এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হলো:
১. সার্জারি: ফুসফুসের আক্রান্ত অংশ অপসারণ করা হয়। তবে, যদি ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে সার্জারি সম্ভব নাও হতে পারে।
২. কেমোথেরাপি: ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে শক্তিশালী ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
৩. রেডিওথেরাপি: উচ্চ শক্তির Lung cancer Lung cancer symptoms Lung cancer treatment options Stage 4 lung cancer survival rate Lung cancer diagnosis tests রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।
৪. টার্গেটেড থেরাপি: ক্যান্সার কোষের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
৫. ইমিউনোথেরাপি: রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করা হয়।
স্টেজ ৪ লাং ক্যান্সার এবং বেঁচে থাকার হার
স্টেজ ৪ লাং ক্যান্সার হলো রোগের সবচেয়ে উন্নত পর্যায়, যেখানে ক্যান্সার ফুসফুসের বাইরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই পর্যায়ে ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য না হলেও, চিকিৎসা দ্বারা রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায় এবং জীবনকাল বৃদ্ধি করা সম্ভব।
স্টেজ ৪ লাং ক্যান্সারের পাঁচ বছরের বেঁচে থাকার হার সাধারণত ৫% এর আশেপাশে থাকে। তবে, এটি রোগীর বয়স, শারীরিক অবস্থা, ক্যান্সারের ধরণ এবং চিকিৎসার প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
লাং ক্যান্সারের নির্ণায়ক পরীক্ষা
লাং ক্যান্সারের সঠিক নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়:
১. এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান: ফুসফুসের অভ্যন্তরের ছবি তুলে ক্যান্সারের উপস্থিতি নির্ধারণ করা হয়।
২. বায়োপসি: ফুসফুসের কোষের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়।
৩. এমআরআই বা পিইটি স্ক্যান: ক্যান্সারের বিস্তার নির্ধারণে সহায়তা করে।
৪. স্পাইরোমেট্রি: ফুসফুসের কার্যক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
লাং ক্যান্সার প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
১. ধূমপান ত্যাগ: ধূমপান লাং ক্যান্সারের প্রধান কারণ, তাই ধূমপান ত্যাগ করা উচিত।
২. দূষণমুক্ত পরিবেশ: দূষিত পরিবেশে না থাকা এবং দূষণমুক্ত পরিবেশে বসবাস করা।
৩. নিয়মিত স্ক্রিনিং: বিশেষ করে ৫৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সীদের জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং করা উচিত।
উপসংহার
লাং ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এর প্রভাব কমানো সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ধূমপান ত্যাগ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন লাং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। রোগীর জন্য সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ধারণে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।